ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ নিয়ে আশঙ্কা: বঙ্গোপসাগরে নতুন উৎকণ্ঠার ছায়া

TRENDING

Sofia

5/16/20251 min read

বঙ্গোপসাগরে নতুন করে আশঙ্কার ছায়া ফেলেছে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’। প্রতি বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা দেখা গেলেও, এবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে উদ্বেগ বাড়ছে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে। আইলা, আমফান, ফণী—এই সময়ে এমন ভয়াবহ ঝড়ের স্মৃতি এখনও তাজা। তবে এখন পর্যন্ত কি সত্যিই ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে, নাকি এটি শুধুই মৌসুমি আতঙ্ক? আসুন জেনে নিই সর্বশেষ আপডেট, বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা এবং উপকূলের মানুষের জন্য এর অর্থ কী।

সর্বশেষ আপডেট: ‘শক্তি’ কি আসছে?

আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD) ও ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (IMD) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছে, যা আন্দামান সাগরের উপরে অবস্থান করছে। এটি ২৩ থেকে ২৮ মে-র মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’-তে রূপ নিতে পারে। যদি এটি তীব্র হয়, তবে ২৪ থেকে ২৬ মে-র মধ্যে ওড়িশার উপকূল থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পর্যন্ত এর প্রভাব পড়তে পারে। পশ্চিমবঙ্গ এবং খুলনা অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকতে পারে। ‘শক্তি’ নামটি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা, যা বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার নামকরণের নিয়ম অনুসরণ করে।

তবে, IMD জানিয়েছে যে এখন পর্যন্ত কোনও ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা জারি করা হয়নি। বঙ্গোপসাগরে ১.৫ কিমি থেকে ৭.৬ কিমি উচ্চতায় একটি ঘূর্ণাবর্ত দেখা গেছে, কিন্তু এটি ঝড়ে পরিণত হবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। BMD-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই মাসে ১-৩টি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে, যার মধ্যে একটি ঝড়ে রূপ নিতে পারে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কেন মে মাস? ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমি প্রবণতা

মে মাসে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা ইতিহাস থেকেই প্রমাণিত। ২০২০-র আমফান এবং ২০১৯-এর ফণী এই সময়ে এসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল। বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই সময়ে সমুদ্রের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পূর্বাভাসী বায়ুর আর্দ্রতা ঝড় গঠনের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ঝড়গুলি আরও তীব্র এবং ঘন ঘন হচ্ছে। এবছর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ১৩ মে থেকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে প্রবেশ করেছে—গত সাত বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে আগে—যা ঝড়ের সম্ভাবনাকে আরও জটিল করে তুলছে।

প্রস্তুতি এবং জনমত

ভারত ও বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। উপকূলীয় বন্যা, ভারী বৃষ্টি এবং প্রবল বাতাসের আশঙ্কায় প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা পরীক্ষা করা হচ্ছে। খাদ্য, পানি এবং ওষুধের মতো জরুরি সরঞ্জাম মজুত করা হয়েছে, এবং নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। X-এ জনমত দ্বিধাবিভক্ত—কেউ কেউ পুরনো ঝড়ের স্মৃতি মনে করে আতঙ্কিত, আবার কেউ কেউ এটিকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করছেন, কারণ IMD থেকে এখনও কোনও সতর্কতা জারি হয়নি।

সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি: আশঙ্কা কি যৌক্তিক?

মে মাসে ঝড়ের ইতিহাস আশঙ্কাকে বৈধতা দিলেও, বর্তমানে কোনও নিশ্চিত প্রমাণ নেই। IMD-এর সতর্কতাহীন অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে এই ঘূর্ণাবর্ত ঝড়ে পরিণত নাও হতে পারে। অতীতে এমন পূর্বাভাস কখনও কখনও অতিরঞ্জিত হয়ে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, ‘শক্তি’-এর আলোচনা পশ্চিমবঙ্গে চলমান তাপপ্রবাহের মতো অন্যান্য সমস্যাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে, যেখানে আগামী দুই দিন তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

তবে, ঝুঁকি অবহেলা করাও বিপজ্জনক হতে পারে। এই অঞ্চলের ভঙ্গুরতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়া ক্রমশ অপ্রত্যাশিত হয়ে উঠছে। আগাম প্রস্তুতি একটি বুদ্ধিমান পদক্ষেপ, কিন্তু নিশ্চিত পূর্বাভাসের অভাবে সন্দেহ থেকেই যায়।

এগিয়ে কী করণীয়?

এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ একটি সম্ভাবনা মাত্র, নিশ্চয়তা নয়। উপকূলবর্তী সম্প্রদায়ের উচিত আগামী কয়েকদিনের আপডেটগুলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা। ভ্রমণকারীদের ফ্লাইট এবং ট্রেনের সময়সূচি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত, কারণ ঝড় তীব্র হলে বিঘ্ন ঘটতে পারে। পানি, ওষুধ এবং পাওয়ার ব্যাঙ্কের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করা একটি বাস্তবসম্মত সতর্কতা।

মে মাসের ঝড়ের ভয় এই অঞ্চলের ইতিহাসে গভীরভাবে প্রোথিত, তবে নিশ্চিত সতর্কতা ছাড়া এখনই আতঙ্কিত হওয়ার সময় নয়। ‘শক্তি’ সত্যিকারের হুমকি হয়ে উঠবে, নাকি এটি শুধুই একটি মৌসুমি আতঙ্ক—সেটি জানতে বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়ার দিকে নজর রাখতে হবে।

Related Stories